• ঢাকা, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫

পরিকল্পনা করে এগোতে পারলে বিশ্বকাপেও ভাল করতে পারব: রকি

যুব এশিয়া কাপে পঞ্চম হয়ে যুব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় হকি দল ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ওমানের রাজধানী মাসকাটের ওই আসরে লাল-সবুজ পতাকাধারী খেলোয়াড়দের মধ্যে যে কয়েকজন মাঠে উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মো. রাকিবুল হাসান রকি। দলের হয়ে করেন সর্বোচ্চ ৭ গোল। স্থান নির্ধারণী ম্যাচে চীনের সঙ্গে করেছেন হ্যাটট্রিক। ওমানের বিপক্ষে হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। প্রতিটি জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমন কি, গত জুনে সিঙ্গাপুরে জুনিয়র এএইচএফ কাপ টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করানোর পেছনেও রেখেছিলেন অনন্য ভ‚মিকা। সদ্যসমাপ্ত যুব এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট ও আসন্ন যুব বিশ্বকাপ নিয়ে রকির সঙ্গে নানা প্রসঙ্গে বিস্তর কথাবার্তা শেষে পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: যুব এশিয়া কাপ শুরুর আগে কখনো কি ভেবেছিলেন এ আসর থেকেই যুব বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবেন?
রাকিবুল হাসান রকি: যুব এএইচএফ কাপে গত জুনে যখন সিঙ্গাপুরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছিলাম তখন থেকেই কিন্তু যুব বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন শুরু হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল যুব এশিয়া কাপে ষষ্ঠ স্থানের মধ্যে থাকতে পারলে লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারব। সেই থেকে দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের একটাই চাওয়া ছিল, যে করেই হোক ওমানে আমাদের কোয়ালিফাই করতেই হবে। তবে বিষয়টি খুব সহজ ছিল না। গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক ওমান ছাড়া পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও চীন খুবই শক্তশালী দল ছিল। প্রতিপক্ষ হিসেবে ওই তিনটি দল আমাদের চেয়ে সবদিক থেকেই এগিয়ে ছিল।

প্রশ্ন: গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে কোন ম্যাচটি আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল?
রাকিবুল হাসান রকি: তুলনামূলকভাবে ওমান দুর্বল দল ছিল। কিন্তু হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে ওরা যতই দুর্বল হোক না কেনো ওদের সঙ্গে বরাবরই আমাদের কম্পিটিশন হয়। ওরা যেনো বাংলাদেশের জন্যই প্রস্তুত হয়ে থাকে! তাই প্রথম ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই ভাইটাল ছিল। ম্যাচের ফলের উপর আমাদের আশা-ভরসা নির্ভর করছিল। আসরটি জয় দিয়ে [৩-১] শুরু হয়েছিল বলে সবাই আশাবাদী হয়ে উঠি পরের ম্যাচগুলো নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, দলের সবাই আমরা দারুণ ফর্মে ছিলাম।

প্রশ্ন: মালয়েশিয়ার সঙ্গে পিছিয়ে থেকে লিড পেয়েছিলেন। চীনের সঙ্গে এগিয়ে ছিলেন। তারপরও জয়টা হাতছাড়া হলো কেনো?
রাকিবুল হাসান রকি: একবার এগিয়ে যাবেন, আবার পিছিয়ে পড়বেন, এটাই খেলার অংশ। তবে দিন শেষে ম্যাচের ফল কি দাঁড়ায়- তা দেখার বিষয়। আমি মনে করি, ওই দুটি ম্যাচে মালয়েশিয়া [২-২] ও চীনের [১-১] সঙ্গে ড্র করা ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা। দল হিসেবে মালয়েশিয়া ও চীন খুবই শক্তিশালী। ওদের টেকটিস, টেকনিক, স্ট্রাজেডি অনেক উন্নত। ওরা যোজন যোজন এগিয়ে। তবে ওই দুটি ম্যাচের মধ্যে একটি জিতে গেলেই আমাদের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা ছিল।

প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট জুড়েই টিম বাংলাদেশ দুর্দান্ত ফর্মে ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে শোচনীয় হার, কিভাবে দেখছেন?
রাকিবুল হাসান রকি: সবার দিন সবসময় সমান যায় না। কোনো না কোন দিন ব্যাড ডে যায়। বলতে পারেন সেদিন পাকিস্তানের [৬-০] সঙ্গে আমাদের ব্যাড ডে ছিল।

প্রশ্ন: গ্রুপ পর্বে ড্রয়ের পর পঞ্চম-ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সেই চীনের সঙ্গে আয়েসি জয় কিভাবে পেলেন?
রাকিবুল হাসান রকি: চীনের সঙ্গে গ্রুপ পর্বে এগিয়ে থাকা, ম্যাচ ড্র হওয়া সেই চীনকেই যখন পঞ্চম-ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পেয়ে গেলাম তখন আমাদের মনে হয়েছে ওদের সঙ্গে জয় পাওয়া সম্ভব। কেননা পঞ্চম-অষ্টম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে থাইল্যান্ডকে [৭-২] হারিয়ে যখন যুব বিশ^কাপ কনফার্ম করলাম তখন চীনের সঙ্গে পরবর্তী ম্যাচ নিয়ে বাড়তি কোনো চাপ ছিল না। কেননা এ ম্যাচে আমাদের হারানোর কিছুই ছিল না। বরং জিততে পারলে অনেককিছু পাওয়ার ছিল। সে অর্থে সবার আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ় মনোবলই তাদের সঙ্গে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল। যে কারণে চীনকে [৬-৩] সহজেই হারিয়ে দিয়ে আয়েসি জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলাম।

প্রশ্ন: স্বপ্নের যুব বিশ্বকাপে তো পৌঁছে গেলেন। সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এখন প্রস্তুতিটা কেমন হওয়া দরকার?
রাকিবুল হাসান রকি: আগামী বছর ডিসেম্বরে ভারতে যুব বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। সবাই ভাবছে এখনো এক বছর বাকী, অনেক টাইম আছে! কিন্তু প্রস্তুতির জন্য আমাদের কাছে এটা খুব অল্প সময়। বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে বাস্তবমুখি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। বিশ্বের সব বাঘা বাঘা দল খেলতে আসবে। আমাদের কেবল এশিয়ান দলগুলোর মান ও খেলার ধরণ সর্ম্পকে ধারণা রয়েছে। কিন্তু ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকার দলগুলো সর্ম্পকে তেমন আইডিয়া নেই। এমন কি, তাদের সঙ্গে খেলারও অভিজ্ঞতা নেই। তাই প্রস্তুতিটা এমন হওয়া উচিত যেখানে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না।

প্রশ্ন: আপনি বলছিলেন, প্রস্তুতিটা এমন হওয়া উচিত যেখানে কোনো ঘাটতি থাকবে না। তাহলে আপনার দৃষ্টিতে এ মুহূর্তে দলের প্রয়োজনে কি কি করণীয় আছে বলে মনে করছেন?
রাকিবুল হাসান রকি: আমি মনে করি, যুব বিশ্বকাপ সামনে রেখে এক বছরের জন্য একটি বাস্তবমুখি পরিকল্পনা করা দরকার। এক. দ্রুতসময়ে প্রস্তুতি শুরু করা। দুই. লিগ ও টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে খেলার মধ্যে রাখা। তিন. আমাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। চার. বিদেশের মাটিতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প ও উন্নতর প্রশিক্ষণ। পাঁচ. কোচিং স্টাফ বৃদ্ধি। ছয়. বেশি করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ। সাত. ইউরোপ ও আমেরিকার দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থা করা। আমার বিশ্বাস এসব চাহিদাগুলো পেলে আমরা যুব বিশ্বকাপে ভাল ফল করতে পারব।

সৌজন্যে: পাক্ষিক ক্রীড়াজগত, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

Rent for add