• ঢাকা, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

হকি নিয়ে স্বপ্ন দেখা এক রাত্রি

অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই রাত্রির হকি ক্যারিয়ার। ‘তিনি এলেন, দেখলেন ও জয় করলেন’। শুরুটা তাঁর ২০১৬ সালে। কিন্তু হকির সঙ্গে তখনো তাঁর সেভাবে মিতালি হয়ে উঠেনি। তাঁকে তখন একটু আর্ধটু করে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তালিম দিচ্ছিলেন হাসান চৌধুরী। সেসুবাদে স্থানীয় পর্যায় কিশোরগঞ্জে তিনি কেবল আলো ছড়াতে শুরু করেছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে এসে জাতীয় পর্যায় সবার নজর কাড়েন। শুধু তাই নয়, সেসময় বিশেষ করে তারিকুজ্জামান নান্নু, জাহিদ হোসেন রাজু আর মালয়েশিয়ান গোপিনাথন কৃষ্ণমূর্তির প্রশিক্ষণে নিজেকে আরো শাণিত করে তোলেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৯ সালে জাতীয় নারী হকি দলে ডাক পেলেন। এমনকি এএইচএফ কাপে সিঙ্গাপুরে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন। তারপর তাঁকে আর পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌরমহিলা কলেজে অনার্স পড়ুয়া এ ছাত্রী জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে নিজেকে দেশসেরা সেন্টার মিডফিল্ডার হিসেবেও পরিণত করেছেন। –সৌজন্যে :পাক্ষিক ক্রীড়াজগত, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রাত্রির পুরো নাম ফারদিয়া আক্তার। পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। রাত্রি বলেন, ছোট্টবেলায় আমার আপ্পি লীনা চৌধুরীকে হ্যান্ডবল খেলতে দেখতাম, আমার ভাইয়া রাকিবুল হাসান রকি হকি খেলতেন। তাদের দেখাদেখি আমিও খেলতাম। এভাবেই হকির সঙ্গে মিতালি হয়ে উঠে। তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়া রকি বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছেন। ভাইয়ার পাওয়ার হকি আমাকে দারুণ আকৃষ্ট করে। তাই মাঠে উনাকে অনুসরণ করে দেখার চেষ্টা করি। পরিবারে সবার ছোট্ট বলে সবসময়ই সবার আদরে বড় হয়েছি। পরিবার থেকে সবসময় সাপোর্ট পাচ্ছি। তিনি জানান, আমরা যত বেশি প্রশিক্ষণ পাবো, টুর্নামেন্ট পাবো, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে পারবো ততই আমাদের অভিজ্ঞতা হবে। এর ফলে আরো বেশি ভালো খেলতে পারবো। দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে পারবো। আমাদের লক্ষ্য বিশ^সেরা দলে পরিণত হওয়া। সেই লক্ষেই আমরা এগিয়ে চলেছি।

রাত্রি বলেন, হকি নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি। হকির মাধ্যমে দেশকে বিশ্বে আরো বেশি পরিচিত করতে চাই। হকিতে নেদারল্যান্ড ভক্ত রাত্রি ইউরোপীয় ধাঁচের খেলাটা দারুণ এনজয় করেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর নারী হকির তেমন প্রচলন না থাকলেও খেলা হতো। তবে আমরাই প্রথম ২০১৯ সালে বিদেশের মাটিতে সিঙ্গাপুরে এএইচএফ কাপ খেলতে যাই। সেখানেই দেশের হয়ে আমরা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয় পেয়েছি। সে আসরে আমরা একেবারেই নবাগত দল ছিলাম। সেই টুর্নামেন্টে হংকং, চাইনিজ তাইপে, উজবেকিস্তান ও স্বাগতিক সিঙ্গাপুরের সঙ্গে খেলে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।

রাত্রি এক প্রশ্নে বলেন, হকিতে আমরা আরো এগিয়ে যেতাম। কিন্তু বৈশ্বিক করোনাভাইরাস আমাদের অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এর ফলে চার বছর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই ছিলাম না। এবার ওমানের সালালাহে ফাইভ-এ-সাইড ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পেলাম। আমি দলনায়ক ছিলাম। ওই টুর্নামেন্টে হংকং, চাইনিজ তাইপে, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও স্বাগতিক ওমানের সঙ্গে খেলে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। রাত্রি অপর এক প্রশ্নে বলেন, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন নারী হকি জাগরণে অনেক কাজ করছে। এভাবে আমরা দেশে ও বিদেশের মাটিতে নিয়মিত টুর্নামেন্ট খেলার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

এক নজরে দেখা

নাম : ফারদিয়া আক্তার

ডাক নাম : রাত্রি

পিতা : মো. মঞ্জিল মিয়া

মাতা : সালেহা বেগম

জন্ম তারিখ : ১০ মে

জন্মস্থান : কিশোরগঞ্জ

ভাই-বোন : ৫ বোন, এক ভাই

নিজ অবস্থান : সবার ছোট্ট

উচ্চতা : ৫ ফিট

ওজন : ৪৫ কেজি

পরিচিতি : হকি খেলোয়াড়

খেলার পজিশন : সেন্টার মিডফিল্ডার

খেলা শুরু : ২০১৬ সাল থেকে

জাতীয় পর্যায় : ২০১৭ সাল থেকে

আন্তর্জাতিক পর্যায় : ২০১৯ সাল থেকে

হাতে খড়ি : হাসান চৌধুরী

প্রিয় কোচ : তারিকুজ্জামান নান্নু, জাহিদ হোসেন রাজু

প্রিয় কোচ বিদেশী : গোপিনাথন কৃষ্ণমূর্তি

প্রিয় খেলোয়াড় : রাকিবুল হাসান রকি

অন্য প্রিয় খেলা : ফুটবল

প্রিয় শখ : ভ্রমণ

প্রিয় খাবার : সাদাভাত ও গোস্ত

প্রিয় রং : সাদা, কালো

পছন্দ : খেলাধুলার মধ্যে থাকা

অপছন্দ : নিন্দনীয় কাজ

আদর্শ : মা

বিদেশ সফর : ওমান ও সিঙ্গাপুর

অবসর : হকির নানারকম ভিডিও দেখা

শিক্ষাগত যোগ্যতা : অনার্স প্রথম বর্ষ

খেলোয়াড় না হলে : পড়াশোনায় অধিকতর মনোযোগী হতাম

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য : হকির মাধ্যমে দেশকে পরিচিত করা

প্রিয় মাঠ : মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম ও বিকেএসপি গ্রাউন্ড

জাতীয় পর্যায় সাফল্য : ওয়ালটন নারী হকি একবার ও আন্তস্কুল হকি তিনবার চ্যাম্পিয়ন

স্মরণীয় খেলা : আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২০১৯ সালে প্রথম জয়। সিঙ্গাপুরে এএইচএফ কাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এই জয়।

Rent for add