• ঢাকা, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

প্রস্তুতির চেয়ে ঝক্কি-ঝামেলাই বেশি!

আগামী ২৩ মে থেকে ১ জুন ওমানের সালালায় অনূর্ধ্ব-২১ জুনিয়র এশিয়া কাপ হকি টুর্নামেন্টের নবম আসর শুরু হচ্ছে। ১০ দলের এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে খেলবে। প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ওমান ও উজবেকিস্তান। তবে ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, জাপান, থাইল্যান্ড ও চাইনিজ তাইপে।

এ আসরে ভাল করার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জুনিয়র দল প্রস্তুতি হিসেবে ভারতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে। কিন্তু স্পন্সর না পাওয়ায় বিমানের পরিবর্তে বাস-ট্রেনে চেপেই যুব হকি দলের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই যুগে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের এমন আয়োজন সত্যিই বিরল ঘটনা।

বৃহস্পতিবার রাত ১টায় শ্যামলী পরিবহনে করে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে জুনিয়র দল। সড়কপথে বেনাপোল হয়ে কলকাতা এবং তারপর ট্রেনে দিল্লি। সেখান থেকে হরিয়ানা ও জলন্ধর। প্রস্তুতি শেষ করে আবার দিল্লি ফিরে উড়াল দেবে ওমানের পথে। সবকিছু মিলিয়ে প্রস্তুতির চেয়ে ঝক্কি-ঝামেলাই বেশি হবে খেলোয়াড়দের। এ যেন প্রস্তুতির নামে বাস ও ট্রেন ভ্রমণ!

তবে অবাক ব্যাপার হচ্ছে বাসযোগে ভারত যাওয়া কিংবা সেখানে এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে বাস এবং ট্রেনে জার্নিকে বড় ঘটনা হিসেবে দেখছেন না বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। বরং যুব হকি দলকে যে ভারতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করতে পাঠানো হচ্ছে এবং সেখানে দলগুলোর বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে তাতেই খুশি তিনি খুশি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘চার মাস ধরে অনুশীলনে বর্তমান দলটিকে নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি। তাদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়েছি। কোচিংস্টাফ থেকে ফিজিও-ভিডিও অ্যানালিস্ট সবই ছিল। আমরা পারফেক্ট একটা দল তৈরির জন্য সবধরনের কাজ করেছি। আমরা কন্ডিশনিং ক্যাম্প করতে ভারতে দল পাঠাতে যাচ্ছি। সেখান থেকে আমরা ওমানে যাব। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আশাবাদী কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ছেলেরা অনেক বেশি শিখতে পারবে। সেখানে তারা যে অনুশীলন ম্যাচগুলো খেলবে সেখানে তাদের আরো অভিজ্ঞতা হবে। ম্যাচ টেম্পারামেন্ট বাড়বে। সেই অভিজ্ঞতাকে ধরে রেখে ওমানে আমরা মূল টুর্নামেন্টে নামার আগে আরো তিনটি অনুশীলন ম্যাচ খেলবে। জাপানসহ আরো কয়েকটি টিমের কাছ থেকে সিডিউল নিয়ে রেখেছি। আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমাদের স্বপ্নের যুব বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে নাম তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’

অপর এক প্রশ্নে এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘আমাদের কোনো স্পন্সর নেই। তাই বাজেটও নির্ধারণ হয়নি। আমাদের বুক ভরা সাহস আছে। সেই সাহসের জোরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সব কর্মকর্তারা একত্রিত হয়ে নিজেরা পরিশ্রম করে এই ট্যুরটাকে এগিয়ে নিচ্ছি।

এদিকে প্রধান কোচ মামুন-উর-রশিদ বলেন, ‘কিভাবে আমরা ভারত যাচ্ছি এসব নিয়ে ভাবছি নেই। প্রস্তুতি ম্যাচ, অনুশীলন এবং টুর্নামেন্টে ভাল খেলাই আমাদের লক্ষ্য। ছেলেদের ফিটনেস ভাল আছে। আশা করি তারা টুর্নামেন্টে ভাল করবে।’

প্রাথমিক ক্যাম্প ৩৬ জন নিয়ে শুরু হলেও ভারতে যাচ্ছে ২৩ জনের দল। অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের বেছে নেয়া হয়েছে। ভারতের দুটি প্রদেশ হরিয়ানা ও জলেন্ধরে মোট ১০টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন প্রিন্স, রকি, নয়ন, আমিরুলদের নিয়ে গড়া দলটি। এর মধ্যে হরিয়ানার নারওয়ানাতে ৬টি এবং জলেন্ধরে ৪টি ম্যাচ খেলবে দল। ২৯ এপ্রিল থেকে মাঠের অনুশীলন শুরু করবে তারা।

১ মে প্রথম অনুশীলন ম্যাচ খেলবে যুব দল। হরিয়ানাতে ১ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত মোট ৬টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ম্যাচগুলো হরিয়ানা স্ট্রেট টিম, শহীদ ভগত সিং হকি একাডেমি এবং নারওয়ানা সিটির একটি একাডেমি দলের বিপক্ষে খেলবেন প্রিন্স, রকিরা।

এরপর ১০ মে জলেন্ধরের উদ্দেশে রওনা দেবে দল। জলেন্ধরের লাভলি ইউনিভার্সিটি দল এবং সুরজিৎ একাডেমি বিপক্ষে বাকি চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে তারা। ১৬ মে দিল্লি বিশ্রাম নিয়ে ১৭ তারিখ ওমানের উদ্দেশে রওনা দেবে। সবগুলো প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে ১৮ জনের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হবে বলে জানান কোচ মামুন-উর-রশিদ।

দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া প্রিন্স লাল সামন্দ ভারতের কন্ডিশনিং ক্যাম্প এবং প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ আয়োজন করাতে খুশি ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, আমরা কিভাবে ভারতে গেলাম সেটা বড় কথা নয়। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলনের মধ্যে আছি। সবাই ফিট আছি। ভারতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প, প্রস্তুতি ম্যাচ আমাদের ওমানে কাজে দেবে। আমরা চেষ্টা করব নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে অর্থাৎ ওমানে সেরা চার দলে থাকা।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওমানে জুনিয়র এএইচএফ কাপ হকি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জুনিয়র এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। যে দলটি জুনিয়র এএইচএফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাদের নিয়েই গঠিত হয়েছে জুনিয়র হকি এশিয়া কাপের দল। সঙ্গে বেশ কয়েক নতুন মুখও রয়েছে। যাদের অধিকাংশই বিকেএসপির বর্তমান শিক্ষার্থী। জানুয়ারিতে এএইচএফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মার্চের ৬ তারিখ থেকে ৩৬ জন খেলোয়াড় নিয়ে শুরু হয় এশিয়া কাপের প্রস্তুতিপর্ব। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের লক্ষ্য সেরা চারে অর্থাৎ সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়া। ১০ দলের আসরে সেরা চারে থাকলে মিলবে জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার টিকিট। সেই লক্ষ্যেই দলটিকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে হকি ফেডারেশন।

 

 

 

 

Rent for add