মোরসালিন আহমেদ : ১১ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ২:৫৮:৫৪
আন্তর্জাতিক আঙিনায় ঘরোয়া হকি যতটা সচল দেখা যায়, ঠিক তার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে ততটা সচল নয়। তবুও কোনো রকমে এগিয়ে চলেছে সম্ভাবনাময় এ খেলাটি। একটা সময় যেখানে ফুটবলের পর হকির জনপ্রিয়তা ছিল দেশব্যাপী- সেটাই এখন দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে। ২০১৮ সালের পর জাতীয় হকি এখনো মাঠে গড়াতে পারেনি। এমন কি ২০১৮ সালের পর থেকে প্রথম বিভাগ হকি লিগও মাঠে নেই। শুধু কি তাই! ২০১৮ সাল থেকে দ্বিতীয় বিভাগ হকি লিগও উধা। ইতোমধ্যে প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগ থেকেও একটি মৌসুম হারিয়ে গেছে। এমন কি বিদায়ী বছরে সারা জাগানিয়া প্রথম ফ্রাঞ্চাইজি হকি লিগ শেষে এখনো পুরো পারিশ্রমিক পাননি খেলোয়াড়রা। এভাবে চলতে থাকা হকির ভবিষৎ নিয়ে উদিগ্ন সবাই। তবে হকির সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিজ্ঞমহল মনে করেন, ক্লাবগুলোর নিজস্ব আয়ের উৎস না থাকায় এবং পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সম্ভাবনাময় এই খেলাটির এ হাল হয়েছে।
২০১৮ সালের পর যখন আর্থিক সঙ্কটে ক্লাবগুলো প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে দল নামাতে পারছিল না তখন ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটি টাকার অনুদানে এ লিগ মাঠে গড়িয়েছিল। এরপর ফেডারেশন কর্মকর্তারা এ লিগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। দেখতে দেখতে এরই মধ্যে একটি মৌসুম হারিয়ে গেছে। এদিকে প্রথম বিভাগ হকি লিগ- হবে হচ্ছে এরকম করতে করতে হারিয়ে গেছে চারটি মৌসুম। তারপরও বিদায়ী বছরে এ লিগ মাঠে গড়ানোর জন্য তোড়জোর শুরু হয়েছিল। এমনকি নভেম্বরে দলবদল সম্পান্ন হয়েছিল, কিন্তু ক্লাবগুলোর দৈনদর্শার জন্য লিগ মাঠে গড়াতে পারেনি। অনুদান ছাড়া ক্লাবগুলো খেলবে না- এরকম দাবির মুখে হকি ফেডারেশন প্রত্যেক দলকে ২ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়ে এখন মাঠে নামাতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১২টি দল নিয়ে প্রথম বিভাগ হকি লিগ ৬ মার্চ থেকে মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এরপর নতুন তারিখ নির্ধারণ হয় ১০ মার্চ। সেই তারিখেও খেলা মাঠে গড়ায়নি। শেষতক ১১ মার্চ থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে। চার মৌসুম ধরে মাঠে না থাকা দ্বিতীয় বিভাগ হকি লিগও হয়তো চলতি বছরে মাঠে দেখা যেতে পারে। প্রিমিয়ার আর প্রথম বিভাগের মতো দ্বিতীয় বিভাগেও যে ৭টি দলকে অনুদান দিয়ে মাঠে নামাতে হবে তা সহজেই অনুমেয়!
এদিকে ঘরোয়া হকির মৌসুম শুরু করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আঙিনায়ও হকি ফেডারেশনের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে। সামনে যুব এশিয়া হকি কাপ। আগামী ২৪ মে থেকে ২ জুন এ আসর ওমানে অনুষ্ঠিত হবে। এএইচএফ কাপজয়ী অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এ টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে পৌঁছুতে পারলে স্বপ্নের যুব বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। অপরদিকে জাতীয় দলের সামনে রয়েছে এশিয়া কাপ ও এশিয়ান গেমস। ভবিষৎতে বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ের সেরা বিশে আসতে পারলে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনাও উঁকিঝুঁকি দেবে। তাই জাতীয় দল ও যুব দলকে ওইসব টুর্নামেন্টে ভাল করতে হলে আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। এদিকে আবার মে মাসে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে ফেডারেশনটির নির্বাচনও দুয়ারে কড়া নাড়ছে। অ্যাডহক কমিটি হতে পারে বলেও এমন খবর বাতাসে উড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা অস্থিরভাবের মধ্যেই হকির জট খুলতে চেষ্টা করছে ফেডারেশনটি।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ বলেন, প্রথম বিভাগ শুরু না হওয়ায় দ্বিতীয় বিভাগ লিগ নিয়ে এগুতে পারছিনা। আবার প্রিমিয়ার বিভাগও রয়েছে। এমনকি যুব দল ও জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট রয়েছে সামনে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যুব দলের ক্যাম্প শুরু করেছি। এখন খুব শিগগিরই জাতীয় দলের আবাসিক ক্যাম্প শুরু হবে। তিনি বলেন, ফেডারেশন ২ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া ক্লাবগুলো এখন প্রথম বিভাগ লিগের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করছে। ফলে একটা জট খুলতে যাচ্ছে। এরপর আমরা দ্বিতীয় বিভাগ লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় হকির পথেও এগুবো। অপর এক প্রশ্নে বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণেও আমরা দুই বছর ঠিক মতো সিডিউল অনুযায়ী অনেক কিছুই করতে পারেনি।
বর্তমানে দ্বিতীয় বিভাগ হকি লিগের ৭টি দলের মধ্যে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদে রয়েছেন ইস্ট অ্যান্ড গ্রিন ক্লাবের রফিকুল ইসলাম কামাল ও বর্ণক সমাজের জাফরুল আহসান বাবুল। লিগের অপর দলগুলো হচ্ছে- তেজগাঁও অগ্রগ্রামী, রক্তিম সংঘ, ঢাকা ইয়াং স্টার, উদিতি ও ঢাকা হকি ক্লাব। এদিকে প্রথম বিভাগ হকি লিগের ১২টি দলের মধ্যে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদে ৭টি ক্লাবের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা হলেন- ঊষা ক্রীড়া চক্রের আব্দুর রশিদ সিকদার, হকি ঢাকা ইউনাইটেডের সাজেদ এ এ আদেল, ব্যাচেলার্স স্পোর্টি ক্লাবের খাজা তাহের লতিফ মুন্না, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কামরুল ইসলাম কিসমত, শিশু-কিশোর সংঘের মো. ফয়সাল আহসান উল্লাহ, কম্বাইড স্পোর্টিং ক্লাবের জহিরুল ইসলাম মিতুল ও মুক্ত বিহঙ্গ তরুণ সংঘের তারেক এ আদেল। এছাড়া লিগের অন্য দলগুলো হচ্ছে- পিডব্লিউডি, রেলওয়ে স্পোর্টিং ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, শান্তিনগর স্পোর্টিং ক্লাব ও রায়ের বাজার স্পোর্টিং ক্লাব। অপরদিকে প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগের ১২টি দলের মধ্যে ৭টি ক্লাবেরও প্রতিনিধি রয়েছে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদে। তারা হলেন- মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, আবাহনী লিমিটেডের জাকি আহমেদ রিপন, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের মো. ইউসুফ আলী, বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবের হাজী মো. হুমায়ুন, ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের বদরুল ইসলাম দিপু, দিলকুলা স্পোর্টিং ক্লাবের সাফায়াত হোসেন ডালিম এবং ওয়ারী ক্লাবের জামিল এ নাসের। লিগের অন্য দলগুলো হচ্ছে- সোনালী ব্যাংক, সাধারণ বীমা, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ পুলিশ ও অ্যাজাক্স স্পোর্টিং ক্লাব। যেখানে হকি ফেডারেশনের ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৬ জনই ক্লাব প্রতিনিধি- সেখানে কিভাবে লিগ অনিয়মিত হয়ে পড়ে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়!
Rent for add