মোরসালিন আহমেদ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৮:১২:৫০

[সৌজন্যে: পাক্ষিক ক্রীড়াজগত, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫]
জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো করেছে। অনেকের ধারণা ছিল হালি হালি গোল খেয়ে ফিরবে। সবার তলানিতে পড়ে থাকবে। এমন ধারণা অমূলক ছিল না। বাস্তবতার নিরিখে কঠিন গ্রুপে পড়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ছিল সাবেক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, গতবারের ফাইনালিস্ট ফ্রান্স আর এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়া। এরপর গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়া শেষ আট দলের ‘চ্যালেঞ্জার ট্রফি’ লড়াইয়ে লাল-সবুজ জার্সীধারীরা পেয়েছিলেন তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ ওমান, আবারো দক্ষিণ কোরিয়া আর ইউরোপীয় দল অস্ট্রিয়া। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়া থেকে অস্ট্রিয়া ম্যাচ বাই ম্যাচ বাংলাদেশ এমন দুর্দান্ত খেলবে যা ছিল অকল্পনীয় আর অবিশ্বাস্য! এ অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন হকির তরুণ তুর্কিরা। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জিতে দেখিয়েছে অনন্য কৃতিত্ব। ভারতের চেন্নাই ও মাদুরাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ওমান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জয় পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের কাছে হেরেছে। ৬ ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ৩১ গোল দিয়ে খেয়েছে ১৮ গোল। এদিকে দলের অন্যতম তারকা ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিক স্পেশালিস্ট আমিরুল ইসলাম ৬ ম্যাচে ৫ হ্যাটট্রিক, ৪ বার ম্যাচসেরাসহ ১৮ গোল দিয়ে সর্বাধিক গোলদাতার তালিকায় নিজের নাম লিখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচে বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্স সবার নজর কেড়েছে। প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশ্বপরিসরে আমিরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, মেহরাব হাসান সামিনদের এমন সাফল্যে এবার ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে মৃতপ্রায় হকি আবার জেগে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন হকির সঙ্গে সংশ্লিস্ট অভিজ্ঞমহল।
ভারতে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ২৪টি দেশ ৬টি গ্রুপে প্রতিদ্বদ্বিতা করে। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রতিটি গ্রুপে চারটি করে দল মোকাবেলা করে। ‘এ’ গ্রুপে জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, আয়ারল্যান্ড; ‘বি’ গ্রুপে স্বাগতিক ভারত, সুইজারল্যান্ড, চিলি, ওমান; ‘সি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, জাপান, চীন; ‘ডি’ গ্রুপে স্পেন, বুলগেরিয়া, মিশর, নামিবিয়া; ‘ই’ গ্রপে নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া এবং ‘এফ’ গ্রুপে প্রতিদ্বদ্বিতা করে বাংলাদেশ, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপ পর্বের খেলা শেষে ফরম্যাট অনুযায়ী ১৬টি দল কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করে। তবে শেষ ৮টি দল নিয়ে চ্যালেঞ্জার ট্রফি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে নেমে অসম্ভব ভালো করেছে। চ্যালেঞ্জার ট্রফি জয়ের পাশাপাশি ১৭তম হয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছে। বুক চিতিয়ে লড়াই করে বিশ্ব হকিকে অবাক করেছে। এতোটা ভালো করবে কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি। ম্যাচ বাই ম্যাচ উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিপক্ষের সঙ্গে ময়দানি লড়াইয়ে কেমন করলো বাংলাদেশ এ নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বিশেষ প্রতিবেদন।

বিশ্বকাপে টপ স্কোরার হয়ে তাক লাগালেন আমিরুল। পকেটে পুরলেন ২ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার। বিশ্বের বাঘা বাঘ খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে তিনি ভারতে যে কীর্তি গড়ে এলেন তা ছিল এককথায় অবিশ্বাসই বটে। ভাবা যায়, প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে আমিরুল নৈপুণ্যে বিশ্বমঞ্চে হকির নতুন এক শক্তি বাংলাদেশ! সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে তারকা বনে যাওয়া আমিরুল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গোল করার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এতোগুলো হবে ভাবিনি। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো খেলব। ম্যাচ বাই ম্যাচ সেটা চেষ্টা করেছি। পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। সর্তীথরা যথেষ্ট ভালো খেলেছেন। দলগত পারস্পরিক বোঝাপড়া গোল করতে সহায়তা করেছে। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না হকির এ পোস্টারবয়। ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়েও বিশ্বকাপ খেলতে চান। দলের এ ধারাবাহিকতায় বজায় রাখতে সবাইকে পাশে চান হকির হামজাখ্যাত আমিরুল।
এ সাফল্যের পেছনে যেমন খেলোয়াড়দের অবদান রয়েছে। ঠিক তাদের এ পর্যায় মেলে ধরতে কোচিং স্টাফদের ভ‚মিকাও কম নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সঙ্গে সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি করে ৩ আগস্ট ডাচ কোচ সেগগ্রেড আইকম্যান গণমাধ্যমের সামনে এসে বলেছিলেন বাংলাদেশকে লড়াকু দলে পরিণত করে যুব বিশ্বকাপ হকির আসরে হাজির হতে চান। চেন্নাই-মাদুরাই সেভাইে হাজির হয়েছিলেন। এমন কি, বাস্তবে লাল-সবুজের দলকে বিশ্বকাপে এরচেয়েও তিনি বেশি কিছু উপহার দিয়েছেন- তা একবাক্যে বলা যায়।গ্রুপ পর্বে অন্তত একটি জয় চেয়েছিলেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ড্র নিয়ে তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের সঙ্গে যে দাপুটে ম্যাচে খেলেছে এবং যে মার্জিনে হেরেছে তাতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপে খেলার অতীত অভিজ্ঞতা হলে হয়ত জিতেই যেতে পারত! চ্যালেঞ্জার ট্রফি ম্যাচেও ছিল আমিরুল-রাকিবুল-সামিনদের নজরকাড়া নৈপুণ্যে। এ প্রসঙ্গে ডাচ কোচ সেগগ্রেড আইকম্যান বলেন, এ সাফল্যের রহস্যের পেছনে ছিল প্লেয়ারদের অক্লান্ত পরিশ্রম। খেলার প্রতি একাগ্রতা, আন্তরিকতা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা। সেই সঙ্গে ছিল লড়াকু মনমানসিকতা। ম্যাচ জয়ের আকাঙ্খা। এগিয়ে যাবার স্বপ্ন। যা বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দেয় বিশ্বকাপে। অপর এক প্রশ্নে জানান, এমন সাফল্যের আড়ালে ছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাপোর্ট। সব কিছু মিলিয়ে টিম বাংলাদেশ ছোটদের বিশ^কাপে দারুণ খেলেছে। এ ধারাবাহিকতা বজয় রাখতে পারলে এ ডাচ কোচ মনে করেন ভবিষ্যতে এ দলটি আন্তর্জাতিক আঙিনায় আরো ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।

শুধু খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফই নন, এর বাইরেও ফেডারেশন কর্মকর্তারা নানাভাবে আড়াল থেকে দলকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়েছেন। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদী অনুশীলন, প্রশিক্ষণ, কন্ডিশনিং ক্যাম্প, প্র্যাকটিস ম্যাচ এসব যেনো প্লেয়ারদের অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকেও তাদের তীক্ষ¥ নজরদারি ছিল। তাদেরই একজন হলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাম বিশ্বকাপ দলের ম্যানেজার লে. কর্নেল অব. রিয়াজুল হাসান। তাঁর কর্মদক্ষতাও সবার নজর কেড়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বকাপ সামনে রেখে এক একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভবিষৎতের জাতীয় দল হিসেবে এই দলটিকে গড়ে তোলা। কেননা এ দলটিই আগামীদিনে জাতীয় দলে পরিণত হবে। তাই ভালো খেলতে হলে সবার আগে দলকে বিশ্বমানের ফিটনেস নিয়ে যেকোনো আসরে যেতে হবে। এ জন্য শুরু থেকেই ফিটনেসের উপর বেশি জোর দিয়েছি। যখন খেলোয়াড়রা শতভাগ ফিটনেসে চলে আসছিলেন তখন তাদের জন্য বিদেশী কোচ আনতে নানা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। অনেক কোচ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে সেগগ্রেড আইকম্যানকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁর পরামর্শে এগোতে থাকি। দেশের বাইরে দলকে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পাশাপাশি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলিয়েছি। বিশ্বকাপে নামার আগেও ভারতে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে। প্লেয়ারদের ডেডিকেশনের কারণেই আমরা চমৎকার একটি ফল নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছি। সামনে আমাদের অনেক সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। এবার এই দলকে সামনে রেখে আরো বৃহৎ পরিকল্পনায় এগোতে চাই। এটি করতে গেলে প্রচুর ফান্ড প্রয়োজন। অর্থ একটি ফ্যাক্টর। খুব শিগগিরই সভাপতি মহোদয়সহ কমিটির সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি রূপরেখা দাঁড় করাব।
অধিনায়ক মেহরাব হাসান সামিন বলেন. আমাদের প্ল্যান ছিল প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছি। ভালো খেলার চেষ্টা করব। বাংলাদেশ একটি টিম এটি প্রুভ করতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমাদের প্ল্যান অনুয়ায়ী খেলতে পেরেছি। বড় দলগুলোর সঙ্গে ছোট্ট মার্জিনে লস করেছি। বিশেষ করে আমরা যেভাবে অস্ট্রেলিয়া-ফ্রান্সের সঙ্গে খেলেছি সেখানে যদি আমাদের মিসটেক কম হত এবং যেসব সুযোগ তৈরি হয়েছিল তা কাজে লাগাতে পারলে হয়ত ম্যাচ বের করে আনতে পারতাম। হয়ত প্রথমবারের মতো খেলতে গিয়ে কিছুটা অনভিজ্ঞ হওয়ায় সম্ভব হয়নি। তবে ইউরোপীয় দলগুলোর সঙ্গে কনফিডেন্স নিয়ে খেলতে পেরেছি সেটাও কম নয়। যদিও খেলতে আসার আগে বাইরে থেকে অনেকে অনেক কথা বলছেন- অস্ট্রেলিয়া ভালো টিম, ফ্রান্স ভালো টিম। ওদের হাইট ভালো। তাদের কাছে গোল খাবে। বড় ব্যবধানে হারব। অ্যাজ এ টিম হিসেবে আমরা প্রæভ করেছি আমরাও পারি। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অধিনায়ক সামিন ভবিষ্যতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, দেশের স্বনামধন্য কর্পোরেট হাউস, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানকে হকির পাশে চান।

গ্রুপ পর্ব
২৯ নভেম্বর
বাংলাদেশ ৩:৫ অস্ট্রেলিয়া
বিশ্বকাপ অভিষেকে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল সাবেক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। সবার ধারণা ছিল হালি হালি গোল হবে। কিন্তু তা হয়নি। প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ণ লড়াই হয়েছে। লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। শেষ কোয়ার্টারে ব্যাক টু ব্যাক বেশ কিছু পেনাল্টি থেকে লাল-সবুজ জার্সীধারী খেলোয়াড়রা যদি গোল পেয়ে যেতেন তাহলে ফলটা অন্যরকমও হতে পারত! দাপিয়ে খেলা আমিরুল হ্যাটট্রিক পেলেও অল্পের জন্য দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। চেন্নাইয়ে মেয়র রাধাকৃষ্ণণ স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া ৫-৩ গোলে বাংলাদেশকে পরাজিত করে। প্রথম মিনিটে অলিভার উইলের গোলে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেলে ১৪ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিক স্পেশালিস্ট আমিরুল। এরপর ১৮ মিনিটে ইয়ান গ্রোবেলা, ২২ মিনিটে ডিলান ব্রিক ও ২৩ মিনিটে ডানকান জ্যাকসনের গোলে অস্ট্রেলিয়া সহজ জয়ের পথে হাঁটতে শুরু করে। তবে ৩০ মিনিটে টানা তিনটি পেনাল্টি কর্নার পেলেও লাল-সবুজের দল গোল আদায় করতে পারেনি। ৪৩ মিনিটে এসে আমিরুল একটি গোল পরিশোধ করেন। কিন্তু ৪৮ মিনিটে ডাইকিন স্ট্যাঞ্জারের গোলে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যায় ৫-২ গোলে। ৫৯ মিনিটে আমিরুল অবশ্য গোলের দেখা পেয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। এতে ব্যবধান কমলেও বাংলাদেশ ৩-৫ গোলে হেরে যায়। তবে চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যে দেখিয়ে বিশ^ হকির অন্যতম পরাশক্তি দলের বিপক্ষে আমিরুল ম্যাচসেরার পুরস্কার লাভ করেন।
৩০ নভেম্বর
বাংলাদেশ ৩:৩ দক্ষিণ কোরিয়া
এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের ১৭ মিনিটেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। অনেকে ভেবেছিলেন গোল বন্যায় ভাসতে যাচ্ছে লাল-সবুজের দেশ। কিন্তু এরপরই শুরু হয় আমিরুল ম্যাজিক। একটা সময় মনে হচ্ছিল এই বুঝি বাংলাদেশ জিতেই যাচ্ছে। যদিও কোরিয়ানদের রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় সেটা সম্ভব হয়নি। তবে তিন গোলে পিছিয়ে থেকে তাদের বিপক্ষে আমিরুলের হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশের ৩-৩ গোলের ড্র ছিল অনেক কৃতিত্বের। চেন্নাইয়ে মেয়র রাধাকৃষ্ণণ স্টেডিয়ামে ৮ মিনিটে লি মিন হাইওক, ১৩ মিনিটে সন সিওংহান এবং ১৭ মিনিটে লি মিন হাইওকের গোলে ৩-০ গোল এগিয়ে যায় কোরিয়া। পরবর্তীতে বাংলাদেশের আক্রমণে তারা বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়ে। কোরিয়ানদের চাপের মুখে রেখেই ৩৮, ৪৭ ও ৫৬ মিনিটে আমিরুল গোল আদায় করে নেন। সেই সঙ্গে হ্যাটট্রিকের মুখে দেখেন। এমন কি, ম্যান অব ম্যাচের পুরস্কারও পান।
২ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ ২:৩ ফ্রান্স
ডিফেন্ডিং রানার্সআপ ফ্রান্সের সঙ্গেও বাংলাদেশ অসাধারণ খেলেছে। ইউরোপীয় এ দলকে রীতিমত কষ্টার্জিত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। চেন্নাইয়ে মেয়র রাধাকৃষ্ণণ স্টেডিয়ামে তারা ৩-২ গোলে জয় তুলে নেয়। ৭ মিনিটে টম গেইলার্ডের গোলে ফ্রান্স এগিয়ে যায়। ২৮ মিনিটে এসে মোহাম্মদ আবদুল্লাহর গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। এরপর ৩২ মিনিটে ফের দলকে লিড এনে দেন গ্যাবিন লোরাজুরি। তারপর ৩৮ মিনিটে ফরাসীদের হয়ে গোল করেন জেমস লিডিয়ার্ড। তবে ৫৫ মিনিটে আমিরুলের গোলে বাংলাদেশ পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনে ২-৩ গোলে। এ ম্যাচেও লাল-সবুজ জার্সীধারীরা বেশ কিছু সম্ভাব্য গোলের উৎস হাতছাড়া করে। অন্তত একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হয়ত ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত।

চ্যালেঞ্জার ট্রফি
শেষ আট দলের লড়াই
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলেও গ্রæপ পর্বের গন্ডি পেরোতে পারেনি। এক ড্র আর দুই হার নিয়ে গ্রæপ পর্ব শেষ করায় ১-১৬ দলের লড়াইয়ে উঠে আসতে পারেনি। ফলে ১৭-২৪তম স্থানের জন্য লড়তে হয়েছিল। বিশেষ করে গ্রæপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া শেষ এমন ৮টি দল নিয়ে মাদুরাই আন্তর্জার্তিক হকি স্টেডিয়ামে হয় চ্যালেঞ্জার ট্রফি। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ শতভাগ জয় নিয়ে ট্রফি জয় করে।
৪ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ ১৩:০ ওমান
আমিরুল আর রাকিবুলের হ্যাটট্রিকের উপর ভর করে ওমানের বিপক্ষে ১৩-০ গোলের দাপুটে জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ^কাপে প্রথম জয় তুলে নেয়। প্রায় সমশক্তির এ লড়াই একতরফায় পরিণত হবে- সেটি স্বয়ং বাংলাদেশ তো বটেই, এমন কি ওমানও কল্পনা করতে পারেনি। কোচ সেগগ্রেড আইকম্যানের শীষ্যরা মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিকে রীতিমতো গোল বন্যায় ভাসিয়েছে। একটি মুহূর্তের জন্য তাদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। একচেটিয়ে আধিপত্যে বজায় রেখে আমিরুল হ্যাটট্রিকসহ একাই করেন ৫ গোল। তিনি ১১, ১৫, ১৬, ৩৪ ও ৫৩ মিনিটে গোল করেন। রাকিবুল ১৯, ২৫ ও ৪৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। এমন কি, ম্যাচসেরার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া আবদুল্লাহ ৩৩ ও ৪৭ মিনিটে, সাজু ৫১ ও ৬০ মিনিটে এবং জয় ৪০ মিনিটে গোলের মুখ দেখেন।
৬ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ ৫:৩ দক্ষিণ কোরিয়া
গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ৩ গোলে পিছিয়ে পড়েও আমিরুলের হ্যাটট্রিকের উপর ভর করে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ড্র করেছিল। তবে শেষ আট দলের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে ফের দেখায় লাল-সবুজের দেশ এবার ৫-৩ গোলে জয় তুলে নিতে ভুল করেনি। যদিও ১০ ও ২০ মিনিটে লি মিনহেয়াকে গোলে কোরীয়রা ২ গোলে লিড পেয়েছিল। তবে সেটি তারা বেশিক্ষণ আকড়ে রাখতে পারেনি। ২১ ও ২৩ মিনিটে আমিরুল ২-২ গোলে সমতায় আনেন। এরপর ৩৫ মিনিটে আমিরুলের হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ ৩-২ গোলে এগিয়ে যায়। ৫২ মিনিটে জয় গোল করলে ৪-২ গোলে দাঁড়ায়। ৫৩ মিনিটে লি মিনহেয়াক হ্যাটট্রিক করে ৩-৪ গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনেন। তবে ৬০ মিনিটে রাকিবুলের গোলে বাংলাদেশ ৫-৩ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এ ম্যাচেও আমিরুল হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
৮ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ ৫:৪ অস্ট্রিয়া
আমিরুলের হ্যাটট্রিকসহ হুজাইফা ও রাকিবুলের গোলে বাংলাদেশ ৫-৪ ব্যবধানে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জয় করার পাশাপাশি ১৭তম স্থান লাভ করে। অধিনায়ক সামিনের দল শুরুতে ম্যাচটি একতরফায় পরিণত করলেও শেষ দিকে এসে অস্ট্রিয়া উত্তাপ ছড়াতে থাকে। ম্যাচটি প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ণ করে তোলে। এসময় বাংলাদেশকে বেশ চাপের মুখে খেলতে দেখা যায়। ভাগ্যিস শেষ কোয়াটারে ইউরোপীয় দলটি তেমন অঘটন ঘটায়নি। ম্যাচে আমিরুল ১৯, ৫০ ও ৫১ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। এ ম্যাচে তিনি ম্যাচসেরা হন। এর আগে ২৭ মিনিটে হুজাইফা ও ৩৫ মিনিটে গোল করেন রাকিবুল। তবে অস্ট্রিয়ার হয়ে ৪৪ মিনিটে আন্দোর লোসোনসি, ৫১ মিনিট বেঞ্জামিন কেননা, ৫৭ মিনিট জুলিয়ান কায়সার ও ৫৯ মিনিট অধিনায়ক ম্যাটিউস নিউকোয়াক গোল করেন।

জুনিয়র বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ স্কোয়াড: গোলকিপার: মাহমুদ হাসান, আশরাফুল হক সাদ। ডিফেন্স: মেহরাব হাসান সামিন (অধিনায়ক), আমিরুল ইসলাম, হোজাইফা হোসেন, রামিম হোসেন, আমান শরীফ অভয়, মুন্না ইসলাম। মিডফিল্ড: রাহিদ হোসেন জীবন, তানভীর রহমান সিয়াম, শাহিদুর রহমান সাজু, আজিজার রহমান, আশরাফুল আলম। অফেন্স: দ্বীন ইসলাম, রাকিবুল হাসান, ওবায়দুল হোসেন জয়, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও ইসমাইল হোসেন। কোচ: সেগগ্রেড আইকম্যান। ম্যানেজার: রিয়াজুল হাসান।
Rent for add