• ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘মেয়েরা এতো ভাল খেলতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছিল না’

ফাইভ এ সাইড ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই হকি টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানো বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল এখন প্রশংসায় ভাসছে। ওমানের সালালাহ শহরে প্রথমবারের মতো এ ধরনের টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে লাল-সবুজের দল প্রত্যাশার চেয়েও ভাল করেছে। দলগতভাবে বাংলাদেশ অষ্টম হলেও মেয়েদের নৈপুন্যে ছিল চোখে পড়ার মতো। টুর্নামেন্টে অর্পিতা পাল সর্বাধিক গোলদাতা হয়েছেন। আইরিন আক্তার রিয়া টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি টানা তিনবার ম্যাচসেরা হয়েছেন। সর্বোপরি চার বছর পর আন্তর্জাতিক হকিতে ফেরা নারী দল এক কথায় অসাধারণ খেলেছে। জাতীয় নারী দলের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে হকিবাংলাদেশ.কম এর সঙ্গে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় ওমান থেকে মুঠোফোনে কথা বলেছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। তার সঙ্গে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন : দেশে এখনও ফাইভ এ সাইড হকির প্রচলন শুরু হয়নি। এমনকি খেলোয়াড়রাও এ ধরনের টুর্নামেন্ট খেলে অভ্যস্থ নন। অথচ জাতীয় নারী দল এমন ফরম্যাটে খেলতে নেমে ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই টুর্নামেন্টে দারুণ সাড়া জাগালো। প্রশ্ন হচ্ছে যারা কোনো দিন ফাইভ এ সাইড চোখেই দেখেনি তারা কিভাবে এতো ভাল খেললো?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : এমন প্রশ্নটা তো আমারও। আমি নিজেও অবাক হয়েছি মেয়েদের এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখে। মাঠে ওরা যেভাবে দাপটের সঙ্গে খেলেছে- তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। আমার নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না, আমাদের মেয়েরা এতো ভাল খেলতে পারে। তাদের নয়ন জুড়ানো নৈপুন্যে দেখে খোদ আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের সভাপতি তৈয়ব একরাম ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অনভিজ্ঞ একটা দল এমন দাপুটে ম্যাচ খেলবে- এ ছিল আমার কল্পনারও বাইরে।

প্রশ্ন : যেখানে এমন ফরম্যাটে আমাদের খেলার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই সেখানে ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই হকি টুর্নামেন্টের মতো বড় আসরে দু:সাহসী চ্যালেঞ্জটা কিভাবে নিলেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন তাহলে সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারবেন। আর আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তাহলে স্বপ্ন নিয়ে হাঁটতে পারবেন না। আমার স্বপ্ন কিন্তু ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা- আমার এই প্রাণের বাংলাদেশ। আমার এই পতাকাকে আমি বিশ্ব হকির দরবারে মেলে ধরতে চাই। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই হকি উন্নয়নে কাজ করছি। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আমরা যখন ফাইভ এ সাইড ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই হকি টুর্নামেন্টে খেলার আমন্ত্রণ পেলাম সবাই মিলে সিদ্বান্ত নিলাম যে করেই হোক ওমানে দল পাঠাবো। মাত্র কয়েক দিনের প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে গেলাম। মেয়েরা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভাল খেলেছে। আসলে পুরো কৃতিত্বটাই ওদের।

প্রশ্ন : মেয়েদের এই সাফল্যের পর দেশে ফাইভ এ সাইড হকি প্রচলন নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : ওমানে মেয়েরা তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে প্রমাণ করেছে ভবিষ্যতে ফাইভ এ সাইড হকিতে আমাদের ভাল করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের এই সাফল্য অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। এ নিয়ে কাজ করতে সাহস যোগাচ্ছে। কিভাবে দেশে ফাইভ এ সাইড হকির প্রচলন করা যায় সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সে পথে এগোবে। এর আগে আমরা দেশে একটা ইনডোর স্টেডিয়াম করতে চাচ্ছি। বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি মহোদয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি অচিরেই একটা সুসংবাদ পাবো।

প্রশ্ন : জাতীয় নারী হকি দলের এই সাফল্যকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : এক কথায় অবিশ্বাস্য। ওরা এতো ভাল খেলবে কখনো ভাবতে পারিনি। মাত্র কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে এতোটা সাফল্য পাবো তাও কল্পনা করিনি। মেয়েরা আন্তরিকভাবে মাঠে খেলেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এছাড়া কোচিং স্টাফ ও টিম ম্যানেজমেন্ট ওদের পেছনে যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবকিছু করার চেষ্টা করেছি। সর্বোপরি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সাফল্যে এসেছে। আমরা গ্রুপ পর্বে ১০-৫ গোলে চাইনিজ তাইপে, ৯-৩ গোলে ইরান এবং ৯ -২ গোলে স্বাগতিক ওমানকে হারিয়েছি। তবে ইন্দোনেশিয়ার কাছে ৭-৪ গোলে এবং হংকংয়ের কাছে ১০-৭ গোলে হারলেও ম্যাচ দুটিতে মেয়েরা যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে খেলেছে। এছাড়া সপ্তম/অষ্টম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৮-৫ গোলে চাইনিজ তাইপের কাছে হেরেছি বটে, কিন্তু ম্যাচটি দারুণ হাডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এ টুর্নামেন্টে অর্পিতা পাল ৫টি হ্যাটট্রিকসহ ২০ গোল দিয়ে সর্বাধিক গোলদাতার পুরস্কার পেয়েছেন। আইরিন আক্তার রিয়া টানা তিন ম্যাচে তিনটি হ্যাটট্রিক এবং ওই তিন ম্যাচে পরপর তিনবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার কৃতিত্ব দেখান। যা রিয়ার জন্য অনন্য রেকর্ড হয়ে থাকবে। প্রথম কোনো বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ার এ কৃতিত্ব অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। অর্পিতা ২০টি গোল করে সর্বাধিক গোলদাতার যে রেকর্ড গড়েছেন তা ভাঙা কঠিন। বলতে পারেন, এ টুর্নামেন্টে প্রত্যাশার চেয়ে অর্জন বেশি হয়েছে। এই অর্জনকে ধরে রেখেই সবার সহযোগিতা নিয়ে সামনে এগোতে চাই।

প্রশ্ন : আপনার কথাই ফিরে আসছি। প্রত্যাশার চেয়ে অর্জন বেশি হয়েছে। তাহলে মেয়েদের জন্য কি বিশেষ কোনো ঘোষণা থাকছে?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : ফাইভ এ সাইড ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই হকি টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করায় আমরা খুশি হয়ে জাতীয় নারী দলের জন্য ৬ লাখ টাকা ঘোষণা করেছি।

Rent for add