মোরসালিন আহমেদ : ১১ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ৩:১০:৪৮
অবশেষে চার বছর পর গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রথম বিভাগ হকি লিগ আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ ১১ মার্চ থেকে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে বহুল কাঙ্খিত এ লিগ শুরু হবে। গত নভেম্বরে দলবদলের পর নানান কারণে লিগ মাঠে গড়ানো যাচ্ছিল না। বারবার শুধু তারিখ পিছিয়ে পিছিয়ে বিলম্বিত করা হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, ক্লাবগুলোর আর্থিক সঙ্কটে এক সময় লিগের ভবিষৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ঠিক এ রকম এক পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলো বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনকে সাফ জানিয়ে দেয় আর্থিক অনুদান পাওয়া না গেলে লিগে দল নামানো সম্ভব নয়। এমন দাবি-দাওয়া নিয়ে তিন মাস কেটে গেলে শেষতক ফেডারেশন থেকে প্রত্যেক দলকে দুই লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। সেই অনুদানের অর্থ পাওয়ার পরই প্রথম বিভাগ হকি লিগ মাঠে ফিরতে যাচ্ছে।
এ বছর প্রথম বিভাগ হকি লিগে ১২টি দল অংশ নিচ্ছে। দলগুলো হচ্ছে- ঊষা ক্রীড়া চক্র, হকি ঢাকা ইউনাইটেড, ব্যাচেলার্স স্পোর্টি ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, শিশু-কিশোর সংঘ, কম্বাইড স্পোর্টিং ক্লাব, মুক্ত বিহঙ্গ তরুণ সংঘ, পিডব্লিউডি, রেলওয়ে স্পোর্টিং ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, শান্তিনগর স্পোর্টিং ক্লাব ও রায়েরবাজার স্পোর্টিং ক্লাব। দীর্ঘ দিন লিগ মাঠে না থাকায় আসন্ন লিগে যারা খেলতে যাচ্ছেন তারা নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারবেন আগাম বলা মুসকিল। কেননা চার বছরের মতো তারা নিয়মিত অনুশীলনে নেই। ওই সময়টার মধ্যে খুব একটা টুর্নামেন্ট খেলেছেন তাও নয়। ফলে তাদের ফিটনেস ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এমনকি এ লিগকে সামনে রেখে ক্লাবগুলো খুব বেশি প্রস্তুতিও নিতে পারেনি। কাজেই এ লিগ কতটা প্রাণবন্ত, আর্কষণীয় আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিদেশী কোটায় অতিথি খেলোয়াড়রা ব্যবধানটা গড়ে দিতে পারেন, লিগ কতটা জমজমাট হবে! তবে সবশেষ তথ্য হচ্ছে আজ থেকে শুরু হওয়া এ লিগে রেলওয়ে স্পোর্টিং ক্লাব অংশ নিচ্ছে না।
কাগজ-কলমে ঊষা, ঢাকা হকি ও কম্বাইড খুবই শক্তিশালী দল গড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এবার ত্রিমুখি শিরোপা লড়াই হতে পারে। এমন কি ব্যাচেলার্স, ওয়ান্ডারার্স ও শিশু-কিশোর বেশ ব্যালেন্সড দল গঠন করেছে। এসব ক্লাবগুলো শিরোপা প্রত্যাশীদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী পিডব্লিউডি, মুক্তবিহঙ্গ, ফরাশগঞ্জ, রায়েরবাজার, শান্তিনগর ভাল খেলার চেষ্টা করবে। অতীতে কমবেশি প্রতিটি দলে বিদেশী খেলোয়াড় লক্ষ্য করা গেলেও এবার ঢাকার মাঠে ততটা নাও দেখা যেতে পারে। তবে সম্ভাব্য শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর পাশাপাশি আরো কয়েকটি দল লিগের কয়েকটি ম্যাচের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিদেশী খেলোয়াড় দলে ভিড়াতে পারে। এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে লিগের বাইলজ ও ফিকচার ক্লাবগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্যি কাঙ্খিত লিগ দুয়ারে এখন কড়া নাড়লেও হকি অঙ্গনে এ নিয়ে খুব একটা উল্লাস-উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষ করে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস পরবর্তী ক্লাবগুলোর অর্থ সঙ্কট, দলবদলে সীমিত বাজেট আর খেলোয়াড়দের প্রাপ্ত সম্মানী যথার্থ না মেলায় হয়তো বা এমন ঘোমটভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে হকি অঙনে। একদিকে ক্লাবগুলো চাইছে কোনোরকমে দল মাঠে নামিয়ে লিগ শেষ করতে, অন্যদিকে ফেডারেশন চাইছে চার বছর ধরে আটকে থাকা এ লিগটার জট খুলুক। লিগ কতটা অনিয়মিত তা রোল অব অনার বোর্ডের দিকে তাকালে বোঝা যায় ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রথম বিভাগ হকি লিগ গত ২৪ বছরে হয়েছে মাত্র ১১টি আসর!
লিগের অন্যতম শিরোপা প্রত্যাশী ঊষা ক্রীড়া চক্রের যুগ্মসম্পাদক ফারুক সিকদার বলেন, প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে তাদের দল নেই ছয় বছর ধরে। তাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আগামী মৌসুম থেকে যাতে প্রিমিয়ার লিগ খেলা যায় সেই লক্ষেই দলবদলের মাধ্যমে শক্তিশালী দল গঠনের চেষ্টা করেছেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ লিগে যখন বিদেশী কোটায় দু’জন খেলানোর সুযোগ রয়েছে- সেই সুযোগটা ঊষা অবশ্যই নেবে। লিগের খেলা মাঠে গড়ানোর পর সার্বিক বিবেচনা করে বিদেশী খেলোয়াড় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে হ্যাটট্রিকসহ চারবার চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। কোনো এক কারণে ২০১৬ সালে লিগে অংশ নেইনি বলে প্রথম বিভাগ হকি লিগে অবনমন করা হয়েছে। তাই আসন্ন লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই দল গড়েছে ঊষা।
অপর শিরোপা প্রত্যাশী হকি ঢাকা ইউনাইটেড ও কম্বাইন্ড স্পোর্টিং ক্লাবের কর্ণধার সাজেদ এ এ আদেল বলেন, অনেক দিন ধরে তাঁর দল দু’টি প্রথম বিভাগ লিগে খেলছে। এ বছর শিরোপা জয়ের লক্ষে দল গড়েছেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, দু’টি দলই কেউ কারো থেকে কম শক্তিশালী নয়। তবে মাঠের খেলায় ভাল না খেলতে পারলে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছা কঠিন হবে। আসন্ন এ লিগকে সামনে রেখে তাঁর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলির বাসায় খেলোয়াড়দের আবাসিক ক্যাম্প করেছেন। অপর এক প্রশ্নে বলেন, লিগ মাঠে গড়ানোর পর কোথাও যদি দলের দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায় সেক্ষেত্রে বিদেশী খেলোয়াড় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে প্রথম বিভাগ হকি লিগ কমিটির সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ হুমায়ুন বলেন, দীর্ঘ দিন পর লিগ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। লিগটির সফল সমাপ্তির জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সিঙ্গেল লিগ পদ্ধতিতে প্রতিদিন দু’টি করে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। মোট ৬৬টি ম্যাচ ৩৩ দিনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করছেন। অপর এক প্রশ্নে বলেন, স্থানীয় আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনবোধে লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিদেশী আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনা হবে কি হবে না- তা লিগ কমিটির সভায় সিন্ধান্ত হবে।
Rent for add