মোরসালিন আহমেদ : ১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার, ০:০৪:৪৩
ছোট বেলা থেকেই নানান খেলাধুলার সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন রিতু খানম। যখন যে ক্রীড়ায় অংশ নিতেন সেখানেই পেতেন সাফল্যের ছোঁয়া। ফুটবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, অ্যাথলেটিকস, কাবাডি, সেপাক টাকরো- সর্বত্রই রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। কিন্তু শেষতক থিতু হয়েছেন হকি আঙিনায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় নারী হকি দলের অধিনায়ক। সেই সাথে দেশের প্রথম পেশাদার নারী কোচও বটে। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে চলেছেন। হকি নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন। এগিয়ে যেতে চান বহুদূর।
নড়াইলের মেয়ে রিতু বলেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় নানান খেলাধুলার সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিলাম। ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় নারী ফুটবল দলে ডাক পেয়েছিলাম। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ক্যাম্পে যোগ দিতে পারিনি। এর পর ২০১৮ সালে সেপাক টাকরো জাতীয় নারী দলের হয়ে নেপালে খেলেছি। সেখানে আমরা যুগ্মরানার্সআপ হয়েছিলাম। তিনি জানান, তারও আগে জাতীয় স্কুল-মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকসের জ্যাভলিনে রৌপ্যপদক পেয়েছি। হ্যান্ডবলে আন্ত:বিভাগ চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলাম। খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছি বাস্কেটবল ও কাবাডি।
২১ বছরের তরুণী রিতু লোহাগড়া মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও লক্ষিপাশা আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে স্পোর্টস সায়েন্স নিয়ে অর্নাসে পড়াশোনা করছেন। পিতা মো. রফিকুল ইসলাম ও মাতা শাহনাজ পারভীনের অনুপ্রেরণাই তাকে আজ নারী জগতের খেলাধুলায় সমৃদ্ধ করতে এতোদূর এগিয়ে এনেছে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, কঠোর লকডাউনের সময় বিয়ের জন্য দু’ দুবার পরিবার থেকে চাপাচাপি করলেও হকি খেলার কথা ভেবে রাজী হননি। কারণ নিজেকে হকি আঙিনায় অন্য এক উচ্চতায় দেখতে চান। হকিকে এনে দিতে চান আন্তর্জাতিক সাফল্য।
ঘরোয়া হকির অন্যতম নির্ভরযোগ্য রক্ষণভাগের খেলোয়াড় রিতু জানান, এখনো জাতীয় নারী হকি ও নারী ক্লাব হকি লিগের প্রচলন শুরু হয়নি। তবে নারী হকি নিয়ে কিছুকিছু টুর্নামেন্ট হচ্ছে। যা মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তিনি জানালেন, ২০২১ সালে নারী ডেভেলপমেন্ট স্বাধীনতা কাপ হকিতে বিকেএসপির হয়ে শিরোপা জিতেছেন। তবে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যুব গেমসে নড়াইলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
সম্ভাবনাময় এ নারী খেলোয়াড় মনে করেন বেশি বেশি করে টুর্নামেন্ট আর দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণই এদেশের নারী হকিতে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
নারী হকির এ তারকা খেলোয়াড় বলেন, অনেক আগের থেকে দেশে নারী হকির প্রচলন শুরু হলেও আমরাই ২০১৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছি। আমার নেতৃত্বে সিঙ্গাপুরে এএইচএফ অনূর্ধ্ব-২১ নারী হকিতে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ৬-০ গোলে, চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে ও স্বাগতিক সিঙ্গপুরের বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে গেলেও আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছিলাম। যা ছিল বাংলাদেশের নারী হকিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম জয়। তিনি জানান, অল্প দিনের প্রশিক্ষণ আর অনভিজ্ঞতার কারণেই মূলত হেরে যাই। তবে নিয়মিত অনুশীলন-প্রশিক্ষণ-প্রতিযোগিতার মধ্য থাকলে পারলে অবশ্যই আরো ভাল করা সম্ভব। কারণ আমরা প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে কিন্তু আমাদের সামর্থ মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।
জাতীয় নারী হকি দলের অধিনায়ক রিতু খানম এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিকেএসপি, হকি ফেডারেশন ও ক্রীড়া পরিদফতর নারী হকি জাগরণে কাজ করছে, যা খুবই ইতিবাচক। শুধু তাই নয়, জেলা পর্যায়ও কিছুকিছু হকি সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছে। এর ফলে আমরা নতুন নতুন খেলোয়াড় পাচ্ছি। ফলে নারী হকি আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যখন জাতীয় নারী হকি প্রতিযোগিতা ও নারী ক্লাব হকি লিগ চালু হবে এবং নারী হকির নানামুখি কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে তখন আমরা আরো দ্রুত এগিয়ে যাব। কাজেই এসবের যোগফল মিলে জাতীয় পর্যায়ের হকি সমৃদ্ধ হয়ে গেলেই কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক হকিতেও ভাল কিছু করে দেখাতে পারব। এক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণ এবং বাস্তবমুখি পরিকল্পনাই কেবল আমাদের কাঙ্খিত পথ দেখাতে পারে।
সৌজন্যে : পাক্ষিক ক্রীড়াজগত, ১ মার্চ ২০২২
Rent for add